
চৌধুরী মাশকুর সালাম: বাংলাদেশ এক নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। একসময় যে দেশ স্বৈরতন্ত্র ও দুর্নীতির অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, আজ সে দেশ এগিয়ে চলেছে ন্যায়, নৈতিকতা ও উন্নয়নের পথে। আর এই পরিবর্তনের মূল কারিগর, যিনি দেশকে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন, তিনি হলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববরেণ্য মানবতাবাদী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
একজন স্বপ্নদ্রষ্টার পথচলা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু একজন অর্থনীতিবিদ নন, তিনি বাঙালির স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাঁর অবদান আজ সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত। ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে যে বিপ্লবের সূচনা তিনি করেছিলেন, সেটি আজ বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। এই অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
সংস্কারের পথে বাংলাদেশ
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
দেশকে গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে এগিয়ে নিতে তিনি গঠন করেছেন
✓সংবিধান সংস্কার কমিশন,
✓বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন,
✓পুলিশ সংস্কার কমিশন,
✓নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন।
এই কমিশনগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো—
✔ সংবিধানকে গণতান্ত্রিক রূপ দেওয়া
✔ বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা
✔ পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা
✔ নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করা
এই সংস্কার কার্যক্রম দেশের জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জনগণ এখন বিশ্বাস করে, আর কখনোই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে আসবে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ইতিহাসের বাঁকে এক বিপ্লব
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের অভ্যুত্থান ঘটে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এই গণজাগরণে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, তাঁর শাসনামলে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
থ্রি-জিরো ভিশন: নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন
ড. ইউনূস কেবল বর্তমান সংকটের সমাধান করছেন না, তিনি ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
তাঁর থ্রি-জিরো ভিশন হলো—
✔ জিরো দারিদ্র্য
✔ জিরো বেকারত্ব
✔ জিরো কার্বন নিঃসরণ
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও টেকসই অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বাংলাদেশের গর্ব
ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল স্বীকৃত। তিনি পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল সহ ১৪০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, একসময় বাংলাদেশে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও মিডিয়া তাঁর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল। তবে আজ দেশের মানুষ সত্য বুঝতে পেরেছে এবং তাঁকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান
বাংলাদেশ আজ নতুন পথের যাত্রী। এই দেশকে দুর্নীতি, স্বৈরাচার ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু একজন নোবেলজয়ী নন, তিনি আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির সেনানায়ক। আসুন, আমরা সবাই তাঁকে জাতীয়ভাবে সম্মান জানাই এবং তাঁর সংস্কার কার্যক্রমকে সর্বাত্মক সমর্থন করি।
আজকের বাংলাদেশ শুধু নতুন নয়, এটি সত্য, ন্যায় ও সুবিচারের বাংলাদেশ! এটি ২য় রিপাবলিক।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X