
চৌধুরী মাশকুর সালাম: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান হামাস-ইহুদী যুদ্ধ নতুন মোড় দিয়েছে। একদিকে মুক্তিকামী হামাস তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, অন্যদিকে ইহুদী সন্ত্রাসী বাহিনী ক্রমবর্ধমান চতুর্মূখী চাপের মুখে পড়ে নিশ্চিহ্ন হবার পথে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে এই যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষনামুলক বিশ্লেষণ করার প্রচেষ্টা করছি।
ইহুদীদের লাগাতার হামলার পরও মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি যুদ্ধারা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, হামাস প্রায় ১৫,০০০ নতুন যোদ্ধা নিয়োগ করেছে। আল কাছছাম ব্রিগেডস নতুন কৌশল অবলম্বন করে ইহুদী বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করছে, যা ইহুদীদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গাজা সরকার হামাসের সামরিক শাখা ‘আল-কাছছাম ব্রিগেডস’ নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে, প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইসরাইলি বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে সফল হামলা চালিয়েছে। ‘ডেথ অ্যাম্বুশ সিরিজ’ নামক এই অপারেশনের আওতায় মেজর ডেভির জিওন রেভা ও তার ডেপুটি ইসরাইল শিকনাজে নিহত হয়েছে, তারা ইয়াহইয়া সিনাওয়ারকে হত্যা করেছিলো। এই সফল অপারেশনগুলো কেবল হামাসের প্রতিরোধ নয়, বরং আক্রমণাত্মক অবস্থান পরিষ্কার করেছে।
গাজা যুদ্ধে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে ইহুদী সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনাপ্রধান জেনারেল হারজি হালে, সাউদান কমান্ড প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ারন ফিংকেলম্যান, গোয়েন্দা ইউনিট ৮২০০-এর প্রধান ইউসি সারিয়েল, ও গাজার উত্তর ব্রিগেডের কমান্ডার হাইম কোহেন। এসব ইহুদী সেনা অফিসারদের পদত্যাগ ইহুদী সন্ত্রাসী সেনাদের মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছে।
ইহুদী প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু’র (বিবি) নেতৃত্ব নিয়ে ইসরাইলের জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, ৬২% ইহুদী নাগরিকরা চায় সে পদত্যাগ করুক, এমনকি লিকুদ পার্টির ১৮% সমর্থকও তার বিদায়ের পক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অসন্তোষ ইহুদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
হামাস ইহুদীদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১১ গাদ্দারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। একইসঙ্গে, বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে ১৭ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পায়ে গুলি করে শাস্তি দিয়েছে। এই বিচারিক অবস্থান হামাসের শাসনব্যবস্থার দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, যেখানে গাজায় আটক ইহুদী সেনাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না, কারণ ৩৯% ইহুদী নাগরিক মনে করে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে না। হামাস-ইহুদী যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছে, যেখানে হামাস সামরিক ও কৌশলগতভাবে পূর্বের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, এবং ইহুদীরা রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটে পড়েছে।
এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হবে কিনা, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ইহুদীদের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তের ওপর। বর্তমান বাস্তবতা ইঙ্গিত দেয় যে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব, ইহুদীদের ভবিষ্যৎ সংকটে পড়ে গেছে, ফিলিস্তিনের মুক্তি সন্নিকটে।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X