
মুফতি লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী
পবিত্র রমজানের মাগফিরাতের দশকের প্রথম দিন আজ। রমজানের ৩০ দিনকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এই তিন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। রহমতের দশক অর্থাৎ রোজার প্রথম ১০ দিন ইতোমধ্যে পার হয়েছে। আজ থেকে শুরু হয়েছে মাগফিরাতের দশক। মাগফিরাতের দশক ২০ রমজান পর্যন্ত। একুশ রমজান থেকে শুরু হবে নাজাতের দশক। এর মধ্য দিয়ে বিদায়ের দিকে দ্রুত এগোতে থাকবে মুমিনদের সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। রমজান মাসের মধ্য এ দশককে মুসলমানদের গুনাহ মাপের জন্য নির্ধারণ করেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কারও কারও মতে, প্রথম দশ রোজা পালনের পর বান্দা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেন।
পবিত্র এ রমজানজুড়ে গুনাহগার বান্দাদের ক্ষমা করেন মহান আল্লাহ। তবে মধ্য এ দশকে ক্ষমাপ্রার্থী বান্দাদের ব্যাপকভাবে ক্ষমা করেন তিনি। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনায় সে তথ্য পাওয়া যায়। হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, একবার রমজানের কিছু আগে একদিন হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরশাদ করলেন, তোমাদের সামনে রমজান আসন্ন। এ মাস অত্যন্ত বরকতের মাস। আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এ মাসে। রহমত বর্ষণ করেন এবং গুনাহ মাফ করেন (তাবরানি)।
কোনো কোনো হাদিস থেকে জানা যায়, বরকতময় এ মাসের প্রতিদিন মাছও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে রোজাদারদের জন্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান উপলক্ষ্যে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি বস্তু দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী উম্মতদের দেওয়া হয়নি। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভী থেকেও অধিক পছন্দনীয় এবং পানির মাছ রোজাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। বিভিন্ন উছিলায় বান্দাদের ক্ষমা করতেই চান তিনি। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-এবং জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম সহনশীল (বাকারা : ২৩৫)।
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহতায়ালার গুণবাচক ৯৯ নাম। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যারা এগুলো আত্মস্থ করবে; তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে (মুসলিম ও তিরমিজি)।
মহান আল্লাহর নামাবলী আত্মস্থ করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজে-কর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসাবে গড়ে তোলা। তাই রমজান মাসের মধ্য দশক যেহেতু মাগফিরাত বা ক্ষমার, সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহপাকের ক্ষমা সংক্রান্ত নামগুলোর জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তার সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আল্লাহতায়ালা আমাদের গুনাহ থেকে মাগফিরাত লাভ এবং বেশি বেশি নেক আমলের তৌফিক দান করুন!
লেখক : নিউইয়র্কের আস-সাফা ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারি জেনারেল-খতিব ও ইউনাইটেড উলামা কাউন্সিল অফ ইউএসএ ইনকের প্রেসিডেন্ট
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X