
শরীফ আহমদ, দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি:
জাতীয় শিল্প হিসেবে পরিচিত চামড়া খাত বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীরা পড়েছেন অস্তিত্বের সংকটে। এক সময়ের লাভজনক এই পেশায় এখন দেখা দিয়েছে চরম ধস। ফলে জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক ব্যবসায়ী অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুঁজি সংকটে তারা চামড়া কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালের করোনা মহামারির পর থেকে টানা কয়েক বছর চামড়া শিল্পে ধস নেমেছে। এমনকি কোরবানির ঈদের সময় অনেকেই কুরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে রেখেছেন।
মূল্য নির্ধারণ ও সরকারি ঘোষণা
চামড়ার দাম নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত ২৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন জানান, কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা বৃদ্ধি করে ঢাকায় ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাসির চামড়া ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা প্রতি বর্গফুট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য ১,৩৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ১,১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চামড়া সংরক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে।
সিলেটে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন
তবে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, বাস্তবতা সরকারের ঘোষণার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। বাজারে এখন গরুর চামড়া প্রতি পিচ (চামড়ার টুকরো হিসেবে) ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের চামড়া সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দরে কিনেছেন বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অথচ একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাতে লবণ, শ্রমিক মজুরি ইত্যাদিতে খরচ হয় প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
পাইকাররা ঈদের দিন বেশি দাম দাবি করলেও, বাস্তবে সেই দামে প্রক্রিয়াজাত চামড়া বিক্রি করে খরচ উঠছে না। এক ট্রাক চামড়া ঢাকায় পাঠাতে পরিবহন খরচ পড়ছে ২৪ হাজার টাকা, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি।
ব্যবসায়ীদের হতাশা ও মন্তব্য
সিলেট শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া বলেন,
> “চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের খরচ ও মজুরির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমরা জিম্মি। অনেকেই পেশা বদল করেছেন। সরকার যদি উদ্যোগ না নেয়, তাহলে চামড়া শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এক সময় যেসব মাদ্রাসা চামড়া বিক্রি করে লাখ টাকার ফান্ড তৈরি করতো, এখন তারা চামড়া বিক্রিই করতে পারছে না। দানের চামড়ার বাজারও ধসে পড়েছে।
চাহিদা ও জোগান
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বিভাগজুড়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ৫১৫টি গবাদিপশু, যেখানে চাহিদা ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ৫০০টির মতো। যদিও কোরবানির পশু প্রস্তুত থাকলেও চামড়ার বাজারে সেই অনুপাতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X