
চৌধুরী মাহদী: একটা সময় ছিল, যখন ঈদের অপেক্ষা ছিল আনন্দের সর্বোচ্চ শিখর। ঈদের আগমনের দিন গুনতাম উচ্ছ্বাসে, কত স্বপ্ন আর পরিকল্পনা নিয়ে। চাঁদ দেখার সেই রোমাঞ্চকর মুহূর্ত, মা-বাবার চোখেমুখে ঈদের প্রস্তুতির ব্যস্ততা, নতুন জামার ঘ্রাণ—সবকিছু মিলে ঈদ যেন ছিল এক অনাবিল খুশির উৎসব।
সন্ধ্যায় বেজে উঠত সেই চিরচেনা সুর, “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।” মনে হতো, এই গান ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন অপূর্ণ!
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভেঙে যেতো। ফজরের নামাজ পড়ে দ্রুত গোসল সেরে নতুন জামা পরে আয়নার সামনে দাঁড়াতাম বারবার, যেন এক রাজপুত্র! সেমাই-পায়েশ খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে ছুটতাম ঈদগাহের দিকে।
পথে যত ছোট ছোট দোকান—মাটির খেলনা, বাহারি পানের পসরা, বাদামের ঠেলা—সবকিছুতেই ছিল এক অন্যরকম আকর্ষণ। ঈদগাহে নামাজ শেষে বাড়ি ফিরতাম হাতে সালামির টাকাগুলো শক্ত করে ধরে, যেন এক অমূল্য সম্পদ! আর সেই টাকাগুলো যত্ন করে জমিয়ে রাখা হতো মাটির ব্যাংকে—একটা ছোট্ট সুখের ভাণ্ডার।
ঈদের খুশি শুধু আমাদের ঘরেই সীমাবদ্ধ থাকত না। পাড়ার প্রতিটি ঘরে দৌড়াতাম, পোলাও-কোরমার গন্ধে মন ভরে যেতো, কিন্তু সত্যিকারের তৃপ্তি ছিল সেই আন্তরিক আতিথেয়তায়, সবার মুখে হাসি দেখে!
কিন্তু এখন?
ঈদের সকাল আসে, নামাজ পড়ে বাসায় ফিরে শুয়ে থাকি অলসভাবে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা, তারপর ঈদ শেষ! কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই শৈশবের উচ্ছ্বাস, সেই নিখাঁদ আনন্দ।
বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের রঙগুলো যেন ফিকে হয়ে গেছে, চাহিদাগুলো বদলে গেছে। তবে একটাই চাওয়া—পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটুক, এই হাসির মধ্যেই যেন লুকিয়ে থাকে আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের ঈদ!
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X