চৌধুরী মাশকুর সালাম: ইহুদীদের একটানা ১৫ মাসের নিষ্ঠুর আগ্রাসন শেষে যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে, বর্বরতা দিয়ে কখনো একটি স্বাধীন জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। ইহুদীদের এই মুসলিম গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে মানে মুসলিম শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা, গাজার প্রতিরোধ শক্তিকে ধ্বংস করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধ্বংস হয়েছে গাজার অবকাঠামো, শহীদ হয়েছেন হাজার হাজার নিরীহ মুসলিম নারী-শিশু, কিন্তু হামাস আজও অটুট। বরং তাঁরা আরও সংঘবদ্ধ হয়েছেন, গাজার প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হাতে নিয়েছেন, এবং জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে নতুন করে সংগঠিত হয়েছেন।
ইহুদীদের যুদ্ধনীতি হলো নির্মম ও পরিকল্পিত গণহত্যা। ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, লক্ষাধিক আহত, ৯০% মানুষ বাস্তুচ্যুত। পুরো গাজাকে এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। অথচ এত কিছু করেও হামাসের অস্তিত্ব মুছে ফেলা বা তাদের কার্যকলাপে অতটুকু চির ধরাতে সক্ষম হতে পারেনি ইহুদীরা। হামাসের যোদ্ধারা এখনো গাজার রাস্তায়, জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন।
এখানেই ইহুদীদের পরাজয় স্পষ্ট। যে মুসলিম শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আধুনিক অস্ত্র প্রয়োগ করে গণহত্যা করলো, সেই সংগঠন আজও গাজার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। এ থেকেই বোঝা যায়, হামাস শুধু একটি সামরিক সংগঠন নয়, এটি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক।
বিশ্বরাজনীতি ও মিডিয়ার মোড়লরা বরাবরই হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে আখ্যা দিতে চেয়েছে, অথচ গাজার সাধারণ মানুষ হামাসকে তাদের রক্ষক মনে করেন। কারণ, হামাসই একমাত্র শক্তি যারা দখলদার সন্ত্রাসী ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।
হামাসের প্রতি গাজার জনগণের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে সন্ত্রাসী ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একমাত্র কার্যকর উপায়ই হামাসের নীতি। সাম্প্রতিক জরিপগুলোও দেখিয়েছে যে, ইহুদীদের ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক সংকটের মধ্যেও হামাসের জনপ্রিয়তা কমেনি। বরং জনগণ মনে করেন, হামাসের প্রতিরোধমূলক কৌশলই গাজার চূড়ান্ত মুক্তি আনতে পারে।
ইহুদীদের সকল প্রকারের কৌশল নিস্ফল, তারা হামাসকে ধ্বংসের নামে গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে, যার শিকার হয়েছেন হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক মানুষ। অথচ হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বে উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতিই করতে পারেনি। ইহুদীরা প্রতিবারই হামাসের অবকাঠামো ধ্বংসের দাবি করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবার হামাস আরও সুসংগঠিতভাবে পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে।
এই বাস্তবতায় স্পষ্ট যে, ইহুদীদের বর্বরতা গাজার জনগণের মধ্যে ইহুদী-বিদ্বেষ আরও প্রকট করেছে। এই দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে হামাস আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং গাজায় তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। ফলে নতুন করে সংঘাত শুরু হলে ফলাফল একই হবে—গাজা ধ্বংস হবে, নিরীহ মানুষ মরবে, কিন্তু হামাস টিকে থাকবে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
সন্ত্রাসী ইহুদীদের এই অমানবিক যুদ্ধ থেকে একটি কঠিন সত্য স্পষ্ট হয়েছে—সামরিক শক্তি দিয়ে একটি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে ধ্বংস করা যায় না। হামাস যদি দুর্বলও হয়, গাজার জনগণের মন থেকে তাদের মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ইহুদীরা বর্বরতা চালিয়ে গাজার জনগণকে শুধু আরও বেশি হামাসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি নীতির কারণে গাজার সংকট কেবল দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইহুদীরা যদি সত্যিই স্থায়ী সমাধান চাইতো, তবে দখলদারিত্ব ছেড়ে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে আসতো। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এবং ইহুদীরা দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হবে এবং অদূর ভবিশ্যতে এই পবিত্র ভূমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।
মুহুর্ত ২৪ | প্রজন্মের বার্তাবাহক
www.muhurto24.com
বিশ্বময় সবসময় সর্বশেষ খবর জানতে চোখ রাখুন।
সাহিত্য, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, সংবাদ সহ যেকোন বিষয়ে লেখা পাঠাতে পারেন এই ই-মেইলে [email protected]
Muhurto24 মুহুর্ত ২৪ (অনলাইন নিউজ সার্ভিস) © ২০২১ - ২০২৪