মাহদী চৌধুরী: কুয়াশার স্নিগ্ধ চাদরে মোড়ানো গ্রাম বাংলার জনপদ যেন কোনো এক রহস্যময় গল্পের মায়াবী দৃশ্যপট। ভোরের প্রথম আলো যখন কুয়াশার আচ্ছাদনে লুকোচুরি খেলে, তখন টিনের চালে শিশিরের টুপটাপ শব্দ একটি সুরম্য সিম্ফনির মতো বেজে ওঠে। ঘাসের উপর জমে থাকা শিশিরকণা আলোর প্রতিফলনে মুক্তোর মতো ঝলমল করে, আর পায়ের ছোঁয়ায় সেগুলো যেন কেঁপে উঠে। সেই কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে সূর্যের সোনালি কিরণ জানান দেয়, দিন শুরু হতে চলেছে।
গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতের শিরশিরে হিম ঠান্ডাকে পরাভূত করার চেষ্টা করছেন। টং চায়ের দোকানগুলোতে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ওঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলছে অলস আড্ডা। এমন এক সকালে মাঠের পথে দেখা যায়, কৃষক লাঙল-জোয়াল কাঁধে গরু নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছেন। যদিও এই দৃশ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, তবুও কোনো কোনো প্রান্তরে এখনো গরুর লাঙল দিয়ে চাষাবাদ টিকে আছে। শীতের সময়ে সরষে ফুলে ভরা বিস্তীর্ণ ক্ষেত যেন প্রকৃতির এক বিশাল ক্যানভাস, যেখানে কেউ হলুদ রঙের তুলিতে আঁকিয়ে দিয়েছে অদ্ভুত এক মায়াবী দৃশ্য।
শীতের এই অনুভূতিকে পল্লীকবি জসীম উদ্দীন তার "রাখাল ছেলে" কবিতায় চিরন্তন সৌন্দর্যের এক অপার্থিব রূপে চিত্রিত করেছেন:
“ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির ঝরা ঘাসে
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।”
কবির এ পঙক্তিগুলো যেন সরষে ফুলের পাঁপড়ির নরম আলিঙ্গনে শীতের আমন্ত্রণ। হালকা হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসে শীতের মিষ্টি পরশ।
এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল যেন জীবনের এক থমকে থাকা মুহূর্ত। লেপের উষ্ণতায় মোড়ানো অলস সকাল, ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ আর আকাশে কুয়াশার আলতো চাদর – এ যেন সময়ের স্রোতে একটি মন্থর, মায়াবী বিরতি। শীতের প্রকৃতি তার নিজস্ব ছন্দে প্রতিটি মুহূর্তকে জাদুকরি করে তোলে, যা জীবনের কঠোর বাস্তবতায় এক টুকরো সান্ত্বনার স্বপ্ন।
মুহুর্ত ২৪ | প্রজন্মের বার্তাবাহক
www.muhurto24.com
বিশ্বময় সবসময় সর্বশেষ খবর জানতে চোখ রাখুন।
সাহিত্য, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, সংবাদ সহ যেকোন বিষয়ে লেখা পাঠাতে পারেন এই ই-মেইলে [email protected]
Muhurto24 মুহুর্ত ২৪ (অনলাইন নিউজ সার্ভিস) © ২০২১ - ২০২৪