
চৌধুরী মাশকুর সালাম: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) এখনকার প্রযুক্তি জগতের একটি বহুল আলোচিত বিষয়। এটি আমাদের জীবনের প্রায় সবক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তি কবে, কীভাবে এবং কেন আবিষ্কার হলো? এটি কীভাবে কাজ করে এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাই বা কী? চলুন, সহজভাবে জেনে নেওয়া যাক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণাটি প্রথম উঠে আসে ১৯৫৬ সালে। জন ম্যাকার্থি (John McCarthy) নামক একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডার্টমাউথ কলেজের একটি কর্মশালায় “Artificial Intelligence” শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করেন। এর আগে ১৯৪০-এর দশকে অ্যালান টুরিং (Alan Turing) তার বিখ্যাত প্রশ্ন “মেশিন কি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে?”-এর মাধ্যমে এআই প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মূলত ডেটা, অ্যালগরিদম এবং মেশিন লার্নিং-এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এর কার্যপ্রণালী সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়: প্রথমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ করা হয়। তারপর বিভিন্ন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডেটাকে বিশ্লেষণ করা হয়। মেশিন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন নতুন ডেটা যুক্ত করে মেশিন আরও দক্ষ হতে থাকে এটি চলমান থাকে সবসময়।
এআই-এর প্রযুক্তিগত ভিত্তি কি? এই প্রশ্নের উত্তর হলো এআই বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: মেশিন লার্নিং (Machine Learning): এটি ডেটার মাধ্যমে মেশিনকে শেখায়। ডিপ লার্নিং (Deep Learning): মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করার জন্য নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP): ভাষা বুঝতে এবং প্রক্রিয়া করতে ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটার ভিশন: ছবি এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি।
এআই–এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু? এটি কি আসলে বিশ্বস্ত? এই বিষয়টির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভরযোগ্য হতে পারে, তবে এটি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে: ডেটার গুণগত মান: সঠিক ডেটা থাকলে ফলাফলও নির্ভুল হয়। স্বচ্ছতা: কিছু এআই অ্যালগরিদম এত জটিল যে সাধারণ মানুষের জন্য তা বোঝা কঠিন। নৈতিকতা: কখনো কখনো পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি থাকে।
এআইকে মানুষ কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণ ও আপডেট করা হয় নাকি সে নিজে নিজেই পরিচালিত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, এটি মানুষের সাহায্যে নিয়মিত সফটওয়্যার পরীক্ষা ডেটাবেস আপডেট, নতুন প্রযুক্তি এবং ফিচার যোগ করা হয়।
এআই এর কি সীমাবদ্ধতা রয়েছে? উত্তর হবে হ্যা যেমন: সংবেদনশীলতার অভাব: এআই মানবিক আবেগ বা পরিস্থিতি পুরোপুরি বুঝতে পারে না। বড় ডেটার প্রয়োজন: কার্যকর হতে প্রচুর ডেটা লাগে। চাকরির ঝুঁকি: কিছু ক্ষেত্রে এটি মানব শ্রমের বিকল্প হতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি: এআই হ্যাকিং বা ডেটা চুরির শিকার হতে পারে।
আচ্ছা এখন বুঝার চেষ্টা করি এআই সাধারণ মানুষের জন্য কি কি উপকারে আসে? দ্রুত সিদ্ধান্ত: জটিল কাজ দ্রুত সমাধান করা যায়। স্বয়ংক্রিয় সেবা: ব্যাংকিং, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া উন্নত করে। বিনোদন: গেমিং এবং চলচ্চিত্রে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
উপরের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এইকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভবিষ্যতে চিকিৎসা, গবেষণা, পরিবহন এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটি ব্যবহার করার সময় আমাদের নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে হবে।
এআই প্রযুক্তি আমাদের জীবনের গতিকে বদলে দিচ্ছে। এটি যেমন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, তেমনই চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসছে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এআই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ এবং উন্নত করতে পারে।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X