
তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলেছিল.. আমাকে আজও হ্যারেস করে এনএসআই.. সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছেনা.
মুহুর্ত ডেস্কঃ পিলখানা-হত্যাকান্ডের শিকার শহীদ, মেজর তানভীর হায়দার নূরের স্ত্রী তাসনুভা মাহা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেছেন।
নিম্নে তার পূর্ণ হুবহু বক্তব্যঃ
আমার স্বামী শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূর ২৫ ফেব্রুয়ারি আমার হাজবেন্ড ৭:৪০ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তার সাথে আমার ২বার ফোনে কথা হয়েছিল। তখন তার কাছ থেকে আমি জানতে পারি যে দরবার হলে কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে, কিন্তু সে কখনোই বলে নাই যে সেখানে কোন সৈনিকরা বিদ্রোহ করেছে। যে ঘটনাটাকে এ পর্যন্ত সাজানো হয়েছে, যে বিদ্রোহ এটা কখনো বিদ্রোহ ছিল না।
এরপরে আমি আড়াই থেকে তিন মাস পরের কথা বলি। আমার সংসার ছিল ৩৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নে রংপুরে। সেখানে আমি মালপত্র গুছানোর জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পর ওখানের জওয়ানরা এত কান্নাকাটি করেছেন। তারা বলছিল যে আজকে যদি আমরা একজনও থাকতাম, কখনো ম্যাডামকে এভাবে একা ফেরত আসতে হতো না। বাচ্চারা বাবা ছাড়া হতো না। আমাদের মধ্যে যে সম্পর্কটা ছিল জওয়ানদের এবং অফিসারের, সেটা কখনো বিদ্রোহ দিয়ে শেষ হতে পারে না।
এখানে যেটা বোঝানো হয়েছে যে বিদ্রোহ, আপনারা কেউ প্লিজ এটাকে বিদ্রোহ বলবেন না। জওয়ানরা কখনো বিদ্রোহ করতে পারে না, কেউ বিপদগামী হতে পারে, কিন্তু বিদ্রোহ করতে পারে না। হাসিনা সরকারের সামরিক বিষয়ক উপদেষ্টা, তার সাজানো সাময়িক বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ রেহানার দেবর মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী। তাদের সাজানো একটা ঘটনা ছিল, পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ড ছিল বিডিআর বিদ্রোহ। কিন্তু এটা পিলখানা হত্যাকাণ্ড। তারা জওয়ানদের উপরে দোষ দিয়ে এটাকে এভাবে সাজিয়েছিল।
তারপরে আসি, আমি যখন পিলখানায় ছিলাম, আমাকে রুম থেকে ধরে নিয়ে যায়। আমি যে রুমটার মধ্যে ছিলাম, সেটা ছিল ছায়ানীড় নামে তিন রুমের একটা বাসা। আমার রুমে তিনজন হিন্দি ভাষী লোক প্রবেশ করে, নয় থেকে ১২ জন লোক আমার রুমে প্রবেশ করেছিল। আমাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল। বের করে নেওয়ার পর আমি খেয়াল করেছি, তিনজন লোক হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল। পিলখানাতে তিন বছর আমার হাজবেন্ডের বিডিআর পোস্টিং ছিল। আমি কোনদিন কোন সৈনিকের মুখে হিন্দিতে কথা শুনিনি। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে তারা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিল।
স্কুল থেকে আমার বাচ্চাদের কেড়ে নেয়। কেড়ে নেওয়ার পর তাদের ড্রেস খুলে চেক করে, তারা ছেলে নাকি মেয়ে। তারা তখন আড়াই বছর আর সাড়ে নয় মাস বয়সী ছিল। চেক করে তাদেরকে বলে যে পাকিস্তানি বাচ্চা একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবো না।
বিডিআর সদস্য কি কখনো বলবে পাকিস্তানি বাচ্চা একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবো না? নাকি আমার হাজবেন্ড পাকিস্তানি ছিল? আমি পাকিস্তানি ছিলাম। আমরা কি বাংলাদেশি না? আমরা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছি না? আমার বাবা-মা, তানভীরের বাবা-মা কি বাংলাদেশি না? তাহলে কেন বলা হয়েছিল যে পাকিস্তানি বাচ্চা বাঁচিয়ে রাখবো না? এই কথাগুলা কার সাজানো, কার কথা? এগুলা কি অন্য অন্য দেশ থেকে বলা? না, যারা হিন্দি কথা বলছিল, তারা কারা বলছিল এই কথাগুলা? আমি ৩ মার্চ ২০০৯ সালে তারেক সিদ্দিকীর মিসেস শাহিন সিদ্দিকীকে এই ঘটনা বলেছিলাম। উনাকে বলার পর উনি তখন আমাকে বলেছে, এই কথা কোনভাবে কোন মিডিয়া কোন জায়গায় বলা যাবে না।
আমি কখনোই থামিনি। আমি বলেছি, আমি মিডিয়াতে বলেছি। সেই কথাগুলো কখনো প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। আমি আবুল কাহার আকন্দের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছি। এই কথাগুলো, এই কথাগুলোর উপরে আমি সাইন করতে চেয়েছি। সাইনের কাগজগুলা জমা নেওয়া হয়নি।
আমি আর্মি হেডকোয়ার্টারে জমা দিয়েছি। তখন মইন আহমেদ ছিলেন, কিন্তু এই জিনিসগুলো তারা রাখেননি। আমাকে তারা পরিকল্পিতভাবে তৈরি করে দিয়েছে যে, স্টেটমেন্ট ওখানে সাইন করতে বলেছে, যেটা হিন্দি ভাষা কথাটা লেখা ছিল না। কিন্তু আমি সেখানে সাইন করিনি।
তার কারণে আমাকে এই পর্যন্ত। মানে আজকের দিন পর্যন্ত, একটু আগেও এনএসআই এর একজন লোক এসে আমাকে হ্যারেস্ট করেছে। এই ঘটনাগুলো আমার সাথে রিপিটেডলি হয়ে যাচ্ছে।
আমার যোগ্য সন্তানকে আইএসএসবি থেকে বাদ করা হয়েছে। আমি কোন কিছু নিয়ে কোন বাহিনীকে নিয়ে ছোট করে কথা বলতে চাচ্ছি না, কিন্তু অনেকের অযোগ্য সন্তান থাকছেন এবং যোগ্য সন্তানদের বাদ দেয়া হচ্ছে। লেফটেনেন্ট জেনারেল মুজিবের সন্তান এবার ৮৭ তম লং কোর্সের অফিসার হয়ে বের হয়েছেন। সে যে খুনি একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, সে তো পালিয়ে গেছে। তার ছেলে কি এখন আর্মি অফিসার হইতে পারে?
আমাদের এত কমিটমেন্ট দেয়া হয়েছে। আমি সেগুলো আসবো না, কিন্তু আমার সন্তান ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করার পর, সে কি আইএসবি থেকে আইএসএসবি থেকে বাদ পড়ার মত সন্তান হইতে পারে? তাকে প্রথম দিন অনেক অপমান করা হয়েছে। আমি সেখানে গেলাম না।
আমি শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমার সন্তানকে কেন বাদ করা হয়েছে? কারণ আমি হিন্দি ভাষা এখনো শুনতে পাই। আমি সেপ্টেম্বরে শুনেছি, আমি অক্টোবর মাসে শুনেছি। আমার স্টেটমেন্ট নেওয়া এখনো হয় না। আমি সেনাপ্রধানের কাছে দরখাস্ত করেছি। আমার দরখাস্তের কোন উত্তর আসে নাই। তিনটা দরখাস্ত করেছি। আমি সেনাপ্রধানের সাথে ৬ আগস্ট থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেখা করতে চেয়েছি। এমএ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এহসান আছেন, উনি কোনভাবেই দেখা করতে দিচ্ছেন না।
আমার হাজবেন্ডের লাশটা আজ পর্যন্ত আন আইডেন্টিফাইড। আমাকে এটা কোনভাবেই ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে না যে আমি কিভাবে আমার হাজবেন্ডের ডেড বডিটা পাবো। এখন বিডিআর সদস্য যারা আছেন, তারা তো অনেকে কষ্ট করছেন। তাদের পরিবার কষ্ট করছে। তারা নির্দোষ অবস্থায় জেলে আছে। তাদের জামিন হচ্ছে না।
এগুলোর কি কোন বিচার হবে না?
তারা সুবিচার পাবে না?
আমরা তো পাচ্ছি না, তারাও পাচ্ছে না।
এই বিচার আমরা কার কাছে পাবো?
কমিটি হবে?
এভাবে চলতে থাকবে?
এটা একটা চলমান প্রসেসেই থাকবে?
কতদিন থাকবে?
সবকিছু না হয় আমি বুঝলাম,
কিন্তু কতদিন?
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X