
বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি।
বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ও তার দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি করেছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলি আমেরিকার ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য:
গাজার যুদ্ধ বন্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে গাজার যুদ্ধ এবং লেবাননের বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, তিনি পুনরায় ক্ষমতায় ফিরলে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করবেন এবং ইসরায়েলকে লেবাননে আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করবেন। এছাড়াও, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবেন। ট্রাম্পের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি এ বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। এই বক্তব্যের মাঝে তিনি দখলদার ইহুদিবাদী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে ধমকের সূরে বলেন “আমি আমেরিকার অফিসিয়াল প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বেই গাযায় যুদ্ধ বন্ধ করে দাও। লেবানন থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নাও।”
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পূর্বে তার শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যে যে শান্তি বিরাজ করেছিল, তা বর্তমান সময়ে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তার ক্ষমতায় ফিরলে আমেরিকার সামরিক বাহিনীকে গাজা থেকে সরিয়ে আনা হবে এবং এই অঞ্চলের সমস্ত সামরিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
লেবানন এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটানো হবে এবং প্রত্যেককে তাদের নিজস্ব স্থানে ফিরে যেতে উৎসাহিত করা হবে।
বাইডেন প্রশাসন ও আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ।
অন্যদিকে, আমেরিকার অভ্যন্তরে বাইডেন প্রশাসনের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব চলছে, তা দেশের জন্য নতুন করে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। কিছু উচ্চপর্যায়ের আমেরিকান সংস্থা ট্রাম্পের ফেরত আসাকে অবাঞ্ছিত হিসেবে দেখছে এবং তাই তার প্রতিপত্তিকে প্রতিহত করার বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের সমর্থকদের “আবর্জনা” বলে অভিহিত করেছে এবং দেশে সংঘর্ষের অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন যে, এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় তিনি দেশের সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন। তার মতে, বর্তমান প্রশাসন তার প্রত্যাবর্তনকে অবরুদ্ধ করার প্রচেষ্টা করছে এবং এর মধ্যে সিআইএসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকার সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক ধরনের ভীতির আবহ বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসলে আমেরিকার অভ্যন্তরে চলমান সকল সংঘাতের অবসান ঘটাবেন এবং পুনরায় একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিক্রিয়া:
গাজা ও ইউক্রেন সংকটের সম্ভাব্য সমাধান
ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন এবং তার দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউক্রেন সংকটের সম্ভাব্য সমাধানে অনেক আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির সূচনা করতে পারে। ট্রাম্পের মতে, ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সংঘাত বন্ধ হলে মধ্যপ্রাচ্যে সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এই অঞ্চলের সকল মুসলিম দেশ ট্রাম্পের নেতৃত্বে আস্থা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া এবং চীনসহ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ আমেরিকার নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা আশা করে। ইসরায়েল ও লেবানন থেকে শুরু করে ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোর দেন। তার মতে, ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে গেলে আমেরিকান সংস্থাগুলোর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন এবং তিনি ক্ষমতায় আসলে ইউক্রেন সংকটেরও স্থায়ী সমাধান করবেন।
ট্রাম্পের অনন্য রাজনৈতিক কৌশল:
তার ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী’ অবস্থান
ট্রাম্প তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি আমেরিকার কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের প্রতি নিজের নীতিমালা বজায় রাখবেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আমেরিকার জনসাধারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে আস্থা উঠে যাচ্ছে এবং তারা চায় যে এমন নেতৃত্ব আসুক যা এই সব প্রতিষ্ঠানকে শক্ত হাতে পরিচালিত করতে পারে।
বর্তমানে আমেরিকার অভ্যন্তরে সামরিক প্রস্তুতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অগ্রিম পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখা হচ্ছে, যেখানে আমেরিকার পরিস্থিতির প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়তে চলেছে। বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ এবং একে অপরকে দোষারোপের ঘটনা আমেরিকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় এক গভীর সংকট সৃষ্টি করছে।
আমেরিকার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এর পরিণামে সামগ্রিক রাজনীতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে চলেছে। ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতায় আসা এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংকটের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গন এবং বিশ্বব্যাপী ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তার বক্তব্য এবং নীতিমালার মধ্যে নতুন নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে, যা আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window) Facebook
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window) LinkedIn
- Click to share on X (Opens in new window) X
- Click to share on X (Opens in new window) X